পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হলে ‘এ্যানিমেল লাভার’ খ্যাত মো. জুয়েল রানার নেশা সাপ ধরা। শখের বশেই তিনি বিভিন্ন এলাকায় বিষধর সাপ ধরেন। সাপের খবর পেলেই সাপ ধরতে ছুটে যান দূরদুরান্তে। সাপ ধরে বন বিভাগের সহায়তায় নিরাপদ জায়গায় অবমুক্ত করেন। এ কাজের বিনিময়ে কোনো মজুরি বা পারিশ্রমিক নেন না তিনি।
জুয়েল রানা নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউপির মেঘশিমুল গ্রামের মো. মঞ্জুরুল হকের ছেলে। বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুরের ভাংনাহাটি এলাকায় বসবাস করছেন।
শুধু সাপই নয়, জুয়েল রানা অন্যান্য বিষধর প্রাণি ধরতেও পটু। সাভারে অবস্থিত সাপ সংরক্ষণ ও সাপের কামড় সচেতনতায় কাজ করে সরকার স্বীকৃত একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘ডিপ ইকোলজি এ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’ থেকে তিনি চার বছরের প্রশিক্ষণ নেন। তারপর থেকেই তিনি সাপসহ অন্যান্য বন্য প্রাণি উদ্ধারে কাজ করতে থাকেন। এখন পর্যন্ত বসতবাড়ি ও লোকালয় থেকে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত সাপ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে দাঁড়াশ, দুধরাজ, বেত আঁচড়া, ঘরগিন্নি/ঘরচিতি, হেলে, পুয়েসাপ/ব্রাহ্মনী দু’মুখো, ডিমখোর, জলঢোড়া, চিত্রিত ঢোড়া, কোবরা বা গোখরাসহ বিপন্ন প্রজাতির সাপও রয়েছে। এসব সাপ উদ্ধার করে স্থানীয় বন বিভাগের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করছেন জুয়েল।
জুয়েল রানা জানান, ছোট বেলায় হাটবাজারে সাপুড়ে বা বেদেদের সাপের খেলা দেখতাম। তখন থেকেই সাপ ধরার প্রতি আগ্রহ জন্মে। কৃষকের ফসল রক্ষায় ইঁদুর ও কীটপতঙ্গ খেয়ে সাপ ভূমিকা রাখে। সাপ কৃষকের বন্ধু। সাপ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। মূলত মানুষ আর সাপের দ্ব›দ্ধ কমাতে, সাপ সংরক্ষণ ও সর্পদংশনের সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য সাপ ধরে নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সচেতনতার অভাবে সাপের কামড়ে প্রতি বছর ৬ হাজারে অধিক লোক মানুষ মারা যায়। সাপে কাটলেই মানুষের মৃত্যু হবে এমন একটি প্রচলিত ভুল ধারণা চালু আছে। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ সর্প দংশনের ক্ষেত্রে সাপ থাকে নির্বিষ। তবে, সাপ যদি দংশন করে তাহলে যত দ্রæত সম্ভব সাপে কামড়োনোর ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে।
অ্যান্টিভেনম দিতে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হবে। আতংকিত না হয়ে সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার, কবিরাজ, হুজুরের পানি পড়া, ওঝা বা ঝাড় ফুঁকে সময় নষ্ট না করে দ্রæত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে। সঠিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সাপ না মেরে তা ধরার জন্য তাকে খবর দেয়ার অনুরোধ জানান জুয়েল।